উত্তর সমূহ
ব্যবসায়ের ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে।
উত্তর:
সাধারণত মুনাফার উদ্দেশ্যে পরিচালিত, নিয়ন্ত্রিত সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ব্যবসায় বলে। গত কয়েকদিন আগে আমি মাঠে খেলতে গিয়ে কয়েকজন বন্ধুদের কাছ থেকে জিঞ্জেস করলাম যে, তাদের কার বাবা কি করে। অনেকেই বলল ঔষধের দোকান, মুদির দোকান, শাড়ির দোকান, কসমেটিকস এর দোকান ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিত থাকে। তাদের অভিভাবকদের সবগুলো অর্থনৈতিক কাজ ব্যবসায়ের অন্তর্ভূক্ত হবে যদি তারা জীবিকা নির্বাহ ও মুনাফার আশায় উক্ত কাজগুলো করে থাকেন।
মূলত মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ব্যবসায় বলে। পরিবারের সদস্যদের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা, হাস-মুরগি পালন করা, সবজি চায় করাকে ব্যবসায় বলা যায় না। কিন্তু যখন কোনো কৃষক মুনাফার আশায় ধান চাষ করে বা সবজি চাষ করাকে ব্যবসায় বলে গণ্য হবে। তবে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যবসা বলে গণ্য হবে যদি সেগুলো দেশের আইনে বৈধ ও সঠিক উপায়ে পরিচালিত হয়। ব্যবসায়ের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা একে অন্য সব পেশা থেকে আলাদা করেছে।
ব্যবসায়ের সাথে জড়িত পণ্য বা সেবার অবশ্যই আর্থিক মূল্য থাকতে হবে। ব্যবসায়ের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এর সাথে ঝুঁকির সম্পর্ক। মূলত মুনাফা অর্জনের আশাতেই ব্যবসায়ী অর্থ বিনিয়োগ করে। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডর মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি অবশ্যই সেবার মনোভাব থাকতে হবে।
বাবসায়ে বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে হবে।
উত্তর:
ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য সমূহ:
১. উদ্যোগ গ্রহণ: উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসায় শরু হয়ে। যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার জন্য এক বা একাধীক ব্যক্তি উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। নতুন ব্যবসায় শুরু করতে চাইলে উদ্যোগ গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোগ হলো, ঝুঁকি আছে জেনেও মুনাফার আশায় কষ্টসাধ্য কাজে হাত দেয়া।
আর যিনি ব্যবসায় উদ্যোগ নেন তাকে উদ্যোক্তা বলা হয়। তাই উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা একে অপরের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকে। যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উদ্যোগ ও উদ্যোক্তার গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। তাই বলা হয়ে থাকে মানুষের বড় গুণ হলো উদ্যোগ গ্রহণ করা। আর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমেই কেবল শিল্পসহ অন্যান্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব।
২. মুনাফ লাভ: মুনাফা লাভ করা ব্যবসায়ের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ার মূল উদ্দেশ্যই হলো মুনাফা অর্জন করা। ব্যবসায় একটি ঝুঁকিমূলক কর্মকাণ্ড, যেখানে মুনাফা হতে পারে আবার নাও হতে পারে অর্থাৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে। আর মুনাফাকে ব্যবসায়ের ঝুঁকি গ্রহণের পুরুষ্কার স্বরুপ বিবেচনা করা হয়। সুতরাং, যেকোনো ব্যবসায়ের সকল কর্মকাণ্ড মুনাফা অর্জনের উদ্দ্যেশ্যে পরিচালিত হতে হবে তা না হলে এটি ব্যবসাযের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
৩. ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা: ব্যবসায়ের সাথে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সব ধরণের ব্যবসায়েই ঝুঁকি বিদ্যমান থাকে, যদি কোনো ব্যবসায়ে ঝুঁকি না থাকে তাহলে তা ব্যবসায় বলে গণ্য হবে না। ঝুঁকি হলো প্রত্যাশিত কোনো কিছু অর্জন না হওয়া বা আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা। আর অন্যদিকে, অনিশ্চয়তা হলো প্রত্যাশা যে করছি তা হতেও পারে নাও হতে পারে।
যদিও আমরা ঝুঁকির বিপরীতে বিমা গ্রহণ করে এর ক্ষতির মাত্রা কমাতে পারি। কিন্তু অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিমা গ্রহণ করার সুযোগ নাই। ঝুঁকিকে পরিমাপ করা যায়, এর বিপরীতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
৪. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড:
সকল ব্যবসায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে। ব্যবসায়ের সকল ধরনের লেনদেন ও পরিচালনার কাজে অর্থের ব্যবহার করা হয়। সুতরাং, যদি কোনো উদ্যোগ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে তাহলে তা ব্যবসায় বলে বিবেচিত হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যবসায়ের একটি অন্যতাম বৈশিষ্ট্য।
৫. মূলধন: যেকোনো ব্যবসায়ের শুরু করার জন্য মূলধন প্রয়োজন, অর্থাৎ মূলধন ব্যবসাযের প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করে। ব্যবসায়ের মূলধন সংগ্রহ করাও ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ব্যবসায়ীগণ ব্যবসাযের মূলধন সংগ্রহ করে থাকে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে, ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উৎস হতে।
৬. বৈধতা: প্রতিটি ব্যবসায় অবশ্যই বৈধতা হতে হবে কেননা অবৈধ কর্মকাণ্ডকে ব্যবসায় বলে বিবেচিত হয় না। তাই ব্যবসায়ের সকল কর্মকাণ্ডকে বৈধ উপায়ে সম্পাদন করতে হয়। যদি কেউ অসৎ পথ অবলম্বন ও অবৈধ উপায়ে মুনাফ অর্জন করে তাহলে তার কাজকে ব্যবসায় বলা যাবে না। যেমন: চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্র, চাঁদাবাজি ইত্যাদি।
৭. সংগঠন: ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জনের জন্য যখন কিছু ব্যক্তি একত্রিত হয় এবং ধারাবাহিকভাবে ব্যবসায়ের সকল কর্মকাণ্ড দক্ষতার সাথে সমন্বয় সাধন করার কাজে নিয়োজিত থাকে তখন তাকে সংগঠন বলা হয়।
৮. ক্রেতা এবং বিক্রেতা: প্রতিটি ব্যবসায়ের লেনদেনের ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুটি পক্ষ জড়িত থাকে যেমন: ক্রেতা এবং বিক্রেতা। ব্যবসায়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।
৯. লেনদেনের পৌনঃপুনিকতা: যেকোনো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে লেনদেন বারে বারে বা অব্যাহতভাবে সম্পাদিত হয়। যেমন: একজন আম ব্যবসায়ী যিনি নিয়মিতভাবে আম ক্রয় করেন এবং বিক্রি করেন। সুতরাং তিনি তার ব্যবসায়ে সবসময় আম ক্রয়-বিক্রয়ের কাজের সাথে জড়িত থাকেন। কিন্তু কেউ যদি মাঝেমধ্যে তার গাছের আম বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন, সবসময় ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকেন না, তাহলে তাকে ব্যবসায়ী বলা যাবে না।
১০. সামাজিক দায়বদ্ধতা: ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতা রক্ষা করা ব্যবসায়ের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জনগণের ক্ষতি হয় এমন কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা যাবে না। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে খুব সচেতন থাকে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের সাথে জড়িত থাকেন। সুতরাং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতা রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
ব্যবসায়ের প্রকারভেদ উপস্থাপন করে ব্যাখ্যা করতে হবে।
উত্তর:
মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদনের মাধ্যমে উপযোগ সৃষ্টি এবং মানুষের অভাব (বস্তুগত ও অবস্তুগত) পূরণের লক্ষ্যে সেগুলো বণ্টন এবং এর সহায়ক সবরকম বৈধ কার্যকে ব্যবসা বলে।
আধুনিক ব্যবসাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:
০১) শিল্প ০২) বাণিজ্য ০৩) প্রত্যক্ষ সেবা
তবে ব্যবসায় মূলত চারভাগে বিভক্ত। যথা:
০১) একমালিকানা ০২) অংশীদারি ০৩) কোম্পানি ০৪) সমবায়
ব্যবসায়ের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে হবে।
উত্তর:
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত বৈধ অর্থনৈতিক কাজ (পণ্য উৎপাদন, ক্রয়, বিক্রয়, পরিবহন প্রভৃতি) করা হলো ব্যবসায়।
এর মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে মানুষ তার আয় বাড়াতে পারে। আর ব্যবসায়িক কাজ বিস্তৃত হলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষের মাথাপিছু জাতীয় আয় বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হয়। এছাড়া ব্যবসায় এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। এজন্য বর্তমান বিশ্বে ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
ব্যবসায় অর্থ “ব্যস্ত থাকা” অর্থাৎ ব্যবসায় সেই সমস্ত মানবিক ক্রিয়াকালাপের সাথে সম্পর্কিত যেখানে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য ও সেবা উৎপাদন ও বণ্টনের কাজে নিয়োজিত থাকে। একটি জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আজকের ব্যবসায়ের বড় পরিধির জন্য আমরা আমাদের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারছি।
আমরা জানি, ব্যবসায় একটি অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ, যা মানুষের সীমাহীন চাহিদাগুলি পূরণের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। আসুন জেনে নেই, ব্যবসায় কাকে বলে? মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদন ও বণ্টনসহ সকল বৈধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যবসায় বলে। ব্যবসায় অবশ্যই বৈধ উপায়ে হতে হবে অর্থাৎ আপনি তখনই কোনো কাজকে ব্যবসায় বলতে পারবেন যদি এটি বৈধ ও মুনাফা অর্জনের জন্য পরিচালিত হয়।
ব্যবসায়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:
১. পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদন:
ব্যবসায় মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য নতুন নতুন পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে বাজারজাত করে। বর্তমানে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুব সহজেই বাজার থেকে ক্রয় করে ভোগ করতে পারছে তা কেবল ব্যবসায়ের জন্য। আমাদের জীবনকে আরো সহজ ও সুন্দর করতে ব্যবসায় নানান ধরনের পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে যাচ্ছে।
২. প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার:
প্রাকৃতিক সম্পদ প্রকৃতির এক বড় উপহার। প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের জন্য ব্যবসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন: খনিজ পদার্থ, বনজ সম্পদ, পানি সম্পদ ইত্যাদির যথাযথ ও দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন উপযোগ তৈরি করছে। ব্যবসায় প্রাকৃতিক সম্পদের এমনভাবে ব্যবহার করে যা পুরো মানবজাতির উপকারে কাজে আসে।
৩. দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন:
ব্যবসায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্যবসায়ের মাধ্যমে শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটে যার ফলে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্য ও পরিষেবার বিনিময়ে অবদান রাখে। বিদেশে পণ্যসমূহ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বড় অবদান রাখে। সুতারাং বলা যায় ব্যবসায়ের ফলে দেশের মধ্যে মূলধন গঠিত হয়, সঞ্চয় বৃদ্ধি পায় যার মাধ্যমে দেশের জাতীয় আয় বৃ্দ্ধি পায়।
৪. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন:
জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন বলতে বুঝায় সুস্থ্য ও স্বচ্ছন্দ্য জীবনযাপন করা। একটি ব্যবসায় জনগনের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয় যার মাধ্যমে তাদের ক্রয়ক্ষমতা ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।
৫. কর্মসংস্থান:
ব্যবসায় কর্মসংস্থানের একটি অন্যতম উৎস। এটি দেশের বিপুল সংখ্যক জনগনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। ব্যবসায়ের পরিচালনা করার জন্য এবং প্রযুক্তিগত কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের কর্মচারীর প্রয়োজন হয়। যেমন: হোটেল, শিল্প এবং পরিবহন সংস্থার মতো অনেক ধরণের ব্যবসায়িক হাউস ব্যবসায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় যা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন অনেক কর্মচারী বা শ্রমিকের। সুতরাং, ব্যবসায় দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
৬. সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি:
ব্যবসায় সরকারের রাজস্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ব্যবসায়কে নানন ধরনের কর প্রদান করতে হয় যেমন: আয়কর, বিক্রয় কর ইত্যাদি। এইসব কর সংগ্রহ করার মাধ্যমে সরকারের অর্থনেতিক অবস্থার তরান্বিত হয়। সুতরাং, সকল কর সরকারী রাজস্বতে অবদান রাখে এবং দেশের উন্নয়নেও সহায়তা করে।
৭. বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন:
ব্যবসায় বিদেশে পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। যেমন: বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, বাংলাদেশে থেকে বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানি করে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে বিভন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। আমরা জানি, যে দেশ যত বেশি রপ্তানি করে সে দেশ তত বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যায়। সুতারাং, নতুন নতুন শিল্পের প্রসারের মাধ্যমে দেশীয় পণ্য উৎপদান করে তা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা যায়।
৮. যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন:
দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যের সঠিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন সঠিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবহন সংস্থা। তাই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হয়। যার ফলে ব্যবসায়ের কাঁচামাল ও পণ্যসামগ্রী সুষ্ঠভাবে আনায়ন করা যায় এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটে।
৯. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের জন্য ব্যবসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এর মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের ঘটে। এটি বিভিন্ন দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরিতে ও বজায় রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া, দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা এবং উন্নত কূটনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টি হতে সাহায্য করে। আমদানি ও রফতানি হলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রধান ভিত্তি। আর এই আমদানি ও রপ্তানি সৃষ্টি হয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
১০. স্বনির্ভরতা:
ব্যবসায় দেশ ও ব্যক্তিদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সহায়তা করে। এটি নির্ভরতা হ্রাস করে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও সহায়তা করে। সুতরাং, দেশে ব্যবসায়ের বিকাশ স্বাবলম্বিতা, স্বনির্ভরশীলতা এবং আত্ম-সম্মান নিশ্চিত করে।
১১. বাজারের প্রসার:
বর্তমান আধুনিক বিশ্বে গ্রাহকদের প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও সেবা তৈরি করা হয়। সুতরাং, গ্রাহকদের স্বাদ এবং ক্রয় ক্ষমতা অনুযায়ী পণ্যগুলি বিকাশের জন্য দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে উভয়ই গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। যার ফলে বিশ্বজুড়ে গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাজারের প্রসার ও বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বে দেশের অভ্যন্তরে পণ্য ও সেবা বাণিজ্য হতো যার ফলে বাজারও ছোট ছিল কিন্তু বর্তমানে বিদেশী গ্রাহকদের জন্যও পণ্য ও সেবা উৎপাদন করা হয় যার ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে।
১২. ব্যাংক ও বিমা:
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বৃদ্ধির ফলে নিরাপদ লেনদেন এবং ঝুঁকি হ্রাসের প্রয়োজন পড়ে যার ফলে সৃষ্টি হয় ব্যাংক ও বিমা। ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠার ফলে দেশের মধ্যে সঞ্চয় ও মূলধন বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।
১৩. সভ্যতা ও সংস্কৃতি:
ব্যবসায় এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রসার ঘটেছে যার ফলে এক দেশের সাথে অন্য দেশের সম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে বিভিন্ন দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির আদান প্রদানের পথ প্রসারিত হয়।
১৪. নগরায়ন:
ব্যবসায় প্রতিষ্টান বৃদ্ধির ফলে এখন মানুষ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। কেউ অসু্স্থ হলে এখন আর পূর্বের মতো মূল শহরে থেকে সেবা নেওয়া প্রয়োজন পড়ে না। গ্রামে থেকেও মানুষ নানান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে যার ফলে নগরায়নের উদ্ভব হচ্ছে।
সুতরাং যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়াও ব্যবসায় একটি দেশের অর্থনীতির পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ব্যবসায়গুলি পণ্য এবং পরিষেবা সরবরাহ করে। এটি দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে এবং চাকরি সরবরাহ করে।