Class Eight 21th Week Bangla Assignment Answer Given Here.
৭ম শ্রেণির ২১তম সপ্তাহের বাংলা এসাইনমেন্টের উত্তর বা সমাধান
আমাদের গ্রাম
ভূমিকা :
‘বাঁধিলাম ঘর এই শ্যামা আর খঞ্জনার দেশ ভালবেসে,
ভাসানের গান শুনে কতবার ঘর আর খড় গেল ভেসে।
মাথুরের পালা বেঁধে কতবার ফাঁকা হল খড় আর ঘর।’
এদেশ গানের দেশ, কবিতার দেশ, সবুজের দেশ। বাংলার নিসর্গ ছবি, গাছের ফুল, শ্যামল প্রকৃতি, ফসলের মাঠ, পাখির কল-কাকলী, রাখালের সুরধ্বনি, নদীর কলতান, মেঠো পথ প্রভৃতি মানুষকে মুদ্ধ করে; কবির মনে দোলা দেয়। গ্রামে স্নেহ-প্রেম-ভালোবাসা আছে, আছে সৌন্দর্য শ্যামলিমা, আছে সরল প্রাণের চঞ্চলতা। কবির ভাষায়-
‘আমাদের দেশের রাঙা মাটির
আকুল করা ঘ্রাণ
ছুটিয়ে নেয় গাঁয়ের পথে
ভরিয়ে দিতে প্রাণ।’
গ্রামের অবস্থান :
আমাদের গ্রামের নাম রতনপুর । এটি ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার অন্তর্গত । এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী । নদীর দুপাশের প্রাকৃতিক শোভা এ গ্রামকে অপূর্ব সৌন্দর্য দান করেছে । ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুব সহজেই আমাদের গ্রামে আসা যায়।
যাতায়াত ব্যবস্থা :
যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে আমাদের গ্রাম অনেক উন্নত।পঞ্চায়েত রাস্তার মাধ্যমে গ্রামটি পাশের জাতীয় সড়কের সাথে যুক্ত । গ্রামের প্রধান সড়কগুলি পাকা এবং প্রশস্ত । তাই জেলার মহকুমার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ই সুন্দর । মানুষ প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে । তা ছাড়া । সরকারের প্রচেষ্টায় যোগাযোগ ব্যবস্কা সহজ করার জন্য গ্রামের পাশ থেকে সরকারী বাস চালু করা হয়েছে ।
গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য :
আমাদের গ্রামখানি ছবির মতো। আম – জাম , কাঠাল – লিচু , নারিকেল সুপারি , শিমুল – পলাশ , তাল – তমাল আর্ নানাজাতের গাছপালায় সুসজ্জিত আমাদের এই গ্রাম । ঝোপঝাড় লতাপাতার নিবিড় ঘনিষ্ঠতা সবার মন কেড়ে নেয় । পাখপাখালির কলকূজনে সব সময়ই মুখর থাকে গ্রামখানি | দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ , ধান – কাউনের হাতছানি , নিঝুম দুপুরে বটের ছায়ায় রাখালের বাঁশি উদাস করে মনপ্রাণ । দিঘী ডোবা , বিল – ঝিল — কী এক অপূর্ব সৌন্দর্যের সঞ্চয় !
নির্দেশনা অনুসরণ করে নিবন্ধ/রচনা লিখন আমাদের গ্রাম
কবির ভাষায় ‘ আমাদের দেশের রাঙা মাটির আকুল করা ঘ্রাণ ছুটিয়ে নেয় গায়ের পথে ভরিয়ে দিতে প্রাণ’।
পল্লি উন্নয়ন :
আমাদের জাতীয় অর্থনীতির মূল উৎস পল্লি । পল্লি উন্নয়ন ব্যতিত দেশের সর্বমুখী বা সর্বজনীন কল্যাণ সম্ভব নয় । পল্লির অবস্থান ও উন্নয়নের উপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব নির্ভরশীল । তাই পল্লিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে হবে । আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন পল্লিতে তার কোনো অভাব নেই , অভাব শুধু যুগোপযোগী শিক্ষা , আদর্শ ও কর্মপ্রেরণার । পল্লি সব সময়ই উেন্নয়নযোগ্য । শিক্ষা , স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে পল্লির সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন সম্ভব ।
গ্রামের প্রতিষ্ঠান :
আমাদের গ্রামে একটি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে । এ ছাড়া একটি কামিল মাদ্রাসা রয়েছে । আরো রয়েছে একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দুটি বেসরকারি অফিস ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি মসজিদ , একটি মন্দির ও একটি গির্জা রয়েছে । গ্রামের শেষ প্রান্তে রয়েছে একটি পোস্ট অফিস ।
গ্রামের মানুষ :
আমাদের গ্রামে মুসলমান , হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ বাস করে । তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক কোনো ভেদাভেদ নেই ৷ প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই সব মানুষ এখানে সুখে – শান্তিতে বসবাস করে ।
গ্রামের মানুষের জীবিকা :
আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত । এছাড়া কিছু জেলে এবং তাঁতিও এখানে রয়েছে । কিছু মানুষ লেখাপড়া শিখে শহরে চাকরি করে । তবে সে সংখ্যা নিতান্তই কম। এছাড়া কিছু মানুষ দিনমুজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে ।
গ্রামের অর্থনৈতিক উৎস :
বাংলাদেশের বেশিরভাগ গ্রামের মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল তবে আমাদের গ্রামের চিত্র একটু ভিন্ন । গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারেরই একজন বাইরে থাকে । তাদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থাকে মজবুত করেছে গ্রামের আয়ের আরেকটি বড় উৎস কুটির শিল্প । প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নকশীকাথা , উলের তৈরি গালিচা , পাটের তৈরি নানা গৃহসজ্জার পণ্য তৈরি হয় । এগুলো শহরে বিক্রি করে গ্রামের মানুষ প্রচুর অর্থ আয় করে । এছাড়া কৃষিজাত পণ্য যেমন : ধান , পাট , গম ও নানা ধরনের সবজি তরকারি বিক্রি গর করেও গ্রামের মানুষ অর্থ রোজগার করে । প্রতি বুধবার গ্রামে হাট বসে । হাটে শহরের লোকজন এসে সরাসরি গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিজাত পণ্য সংগ্রহ করে ।
গ্রামের সংস্কৃতি :
সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের গ্রাম খুবই উন্নত । ধর্মীয় আচার – অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এখানে নানা ধরনের মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হয় । যেমন : চৈত্র মাসের শেষে চৈত্রসংক্রান্তির মেলা , বৈশাখ মাসে বৈশাখি মেলা , অঘাণ মাসে নবান্ন অনুষ্ঠান , পৌষ মাসে পিঠার অনুষ্ঠান ইত্যাদি । গ্রামের মুসলিম ও হিন্দু বিয়েতে লোকজ গান , নাচ ও খাবারের আয়োজন করা হয় । এ ছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসে স্কুলে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও লোকজন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে ।
উপসংহার :
আমাদের রতনপুর গ্রাম আমাদের কাছে খুব প্রিয়। এ গ্রামের প্রকৃতি মায়ায় জড়ানাে। রতনপুরের মানুষ সহজ-সরল ও অতিথিপরায়ণ। ইছামতী নদীর সৌন্দর্য এ গ্রামকে করেছে অন্য সব গ্রাম থেকে আলাদা। রতনপুর গ্রামের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে।