Class Six 21th Week Bangla Assignment Answer Given Here.
৬ষ্ঠ শ্রেণির ২১তম সপ্তাহের বাংলা অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান বা উত্তর
তারিখ: ২০.১০.২০২১
প্রিয় প্রমি,
আমার শুভেচ্ছা নিও। অনেকদিন পর গতকাল তোমার চিঠি পেলাম। আমার কাছে লেখা এটি তোমার প্রথম চিঠি। শুনে ভালো লাগলো তুমি বাংলা পড়তে পারো।
তাই এ চিঠি বাংলায় লিখছি। এতদিনের চিঠিতে শুধুই জানতে চেয়েছ আমার সম্পর্কে, আর এই প্রথম কি না জানতে চাইলে আমার দেশ, আমার দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে তোমার আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করছে অনেক কিছু লিখবার। কিন্তু বাংলার এ অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য ভাষায় আর কতটুকু বা ফুটিয়ে তোলা যায়।
তুমি মানচিত্রে নিশ্চয় খেয়াল করেছো বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। আমাদের দেশের মতো এমন সুন্দর দেশ বিশ্বে কী আর কোথাও আছে?
ষড়ঋতুর এদেশ একেক সময় একেক রকমভাবে সজ্জিত হয়। একেক ঋতুর ফুল একেক রকম। এদেশের সব জেলাতেই ছড়িয়ে আছে নদী। যেন নদীর বুকেই এদেশ ভাসমান। অসংখ্য খালবিল, নদীতে জেলের মাছ ধরার নৌকা আর পাল তুলে মাঝির দাঁড় টানার দৃশ্য যে কী অপূর্ব হতে পারে তা নিজে না দেখে বিশ্বাস করা যায় না। এছাড়া বাংলাদেশের যে দিকেই তাকাও- শুধু সবুজ আর সবুজ।
জন্মভূমি কবিতার বিষয়বস্তু অবলম্বনে প্রিয় জন্মভূমি সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে প্রবাসী বন্ধুকে একটি পত্র
পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলা নিকেতন । এদেশে রয়েছে উঁচুনিচু পাহাড়, সুনীল সাগর, অবারিত মাঠ, সুবিস্তৃত সুনীল আকাশ– যা এক অপূর্ব চিত্তহারী সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে । নদীবিধৌত সরস ভূমি বলেই হয়তাে এখানে অনায়াসে অসংখ্য বৃক্ষ জন্মে— যা সবুজের সমারােহ সৃষ্টি করে।
আবার এদেশে বিভিন্ন অঞ্চলভেদে প্রকৃতির আলাদা সৌন্দর্য লক্ষণীয়। ভাওয়াল, মধুপুর ও লালমাই পাহাড়ের গজারি ও শালবন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল, উত্তরে গারােপাহাড়, সিলেটের চা বাগান, দক্ষিণের সুন্দরবন আর দ্বীপগুলাে অপূর্ব সুষমামণ্ডিত। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে থাকা দ্বীপভূমিতে তাল, নারকেল আর সুপারির বাগানে শােনা যায় বাতাসের মধুর গুঞ্জরণ। সমুদ্রের উত্তাল গর্জনে ভেসে আসে ভাষার অব্যক্ত ছন্দময়তা।
চট্টগ্রামের ফয়েজ লেক আর ঢাকার বিলাসী বাগানের টবের গাছে শিশির বিন্দুর নরম ছোয়ায় মনােমুগ্ধকর সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে। এ সৌন্দর্য কবি জীবনানন্দ দাশের দৃষ্টি এড়ায়নি। তাই তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন—
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি ,তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর- অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়াে পাতাটির নিচে বসে আছে
ভােরের দোয়েল পাখি- চারদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তুপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশ্বথের করে আছে চুপ……
গ্রামবাংলার সৌন্দর্যই এদেশের প্রকৃত সৌন্দর্য। ৮৭ হাজারেরও বেশি গ্রাম নিয়ে আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশের মাঠে মাঠে সােনার ফসল ফলে। গ্রামে গ্রামে আম-কাঠাল তাল-নারকেল সুপারি খেজুর গাছের সারি। প্রকৃতি | এখানে অকৃপণ। যেন সৌন্দর্যের হাট বসেছে পল্লিতে। যেদিকে চোখ যায় কেবল অন্তহীন সবুজের সমারােহ। তৃষ্ণার্ত চোখে নেশা ধরে যায়।
মনে হয় বিচিত্ৰবেশী প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যে মিশে যেতে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। শ্যামল বৃক্ষের শােভা আর ছায়াস্নিগ্ধ পল্লির কুটিরগুলাে যেন শীতল পরশ দিয়ে ভালােবেসে সবাইকে আপন করে নেয় । মাঠে মাঠে রাখালের গােরু চরানাে আর মাতাল বাঁশির সুর উদাস দুপুরকে ভরিয়ে দেয়।
কোথাও কোথাও পায়ে চলা পথের ওপর বাঁশঝাড় অবাধ্য ভঙ্গিতে নুয়ে পড়েছে। মাঠের মধ্যে বিচিত্র বক্ষরাজি শােভা পায় । স্তব্ধ অতল দিঘির কালাে জল আর আকাশের নীলে যেন বন্ধুত্বের মেলা বসে। তপস্বীর ন্যায় ঝরি নামা বটতলা যেন এক নির্ভরতার আশ্রয়।
পলিমায়ের আঁচলে সােনা ঝরে। সে আচলের পরশে বাংলার মানুষের জীবনেও আসে সখ আর আর প্রশান্তি। বাংলার পল্লিতে জারি, সারি, ভাটিয়ালি সুরের এক অকৃত্রিম বন্ধন । সে বন্ধন যেন নদীর কলকল ধ্বনির সাথে একাকার হয়েই বেজে ওঠে। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে বাংলার কবি, লেখক, বাউল ও চিত্রকরদের । তাইতাে কবি লিখেছেন—
ও আমার দেশের মাটি,
তােমার পরে ঠেকাই মাথা
প্রকৃতি যেন নিজ হাতে প্রাণভরে দান করেছে এই তারুণ্যের প্রতীক ফসল তোলার সময়ে এ সবুজ মাঠ রূপান্তরিত হয় সোনালি প্রান্তরে। মাঠে মাঠে ছড়িয়ে থাকে সোনা আর সোনা। তুমি তো জানো, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত এদেশেই অবস্থিত। বিশাল এই সমুদ্রের তীরে দাঁড়ালে পার্থিব ক্ষণস্থায়ী জীবন যেন হঠাৎ করে হোচট খায়। আর রয়েছে পাহাড়ি শহর সিলেট। এখানে শ্রীপুর নামে একটা জায়গা রয়েছে, যা শিলং পাহাড়ের খুব কাছাকাছি।
এশিয়ান হাইওয়ে যখন পাহাড়ের উদ্দেশ্যে চলে তখন মনে হয়- আর কিছুক্ষনের মধ্যেই আকাশ ছুঁয়ে যাব। শ্রী মঙ্গলে রয়েছে একটি জলপ্রপাত- মাধবকুণ্ড। সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়া থেকে যখন ভীষণ স্রোতে জল পড়ে তখন তা দেখে কোনো আগুন্তুক বিমোহিত না হয়ে পারেন না। শুধু প্রাকৃতিক নয়, বরং অনেক ঐতিহাসিক স্থানেও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। শীতের অতিথি পাখিরা যখন শীতের চাঁদরমোড়া বাংলায় আসে তখন যে কী ভালো লাগে।
আচ্ছা বন্ধু, একবার বেড়াতে এসো না, এ প্রকৃতির কন্যার কোলে! নিশ্চয়ই মজা হবে। আজ এখানেই থাক। আরেকদিন লিখব তোমাকে।
ইতি
তোমার বন্ধু
মনিরা খাতুন