ক) ভাষা আন্দোলনের পটভূমিঃ
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। ভাষা, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভৌগোলিকপরিবেশ, খাদ্যাভ্যাসসহ সকল ক্ষেত্রে বিস্তর ব্যবধান থাকা সত্বেও কেবল ধর্মের ভিত্তিতে এক হাজারমাইলের ব্যবধানে অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তকরে এই অসম রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয়। এই রাষ্ট্রের কর্ণধাররা প্রথমই শোষণ ও বৈষম্যের হাতিয়ার হিসেবেবেছে নেয় বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলাকে। অথচ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় পাকিস্তানেরভাষাগত জনসংখ্যার একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, মোট জনসংখ্যার ৫৪.৬০% বাংলা,২৮.০৪% পাঞ্জাবি, ৫.৮% সিন্ধি, ৭.১% পশতু, ৭.২% উর্দু এবং বাকি অন্যান্য ভাষাভাষী নাগরিক। এরথেকে দেখা যায় উর্দু ছিল পাকিস্তানি ভাষাভাষির দিক থেকে ৩য় স্থানে।
অন্যদিকে তদানীন্তন পূর্ব বঙ্গের জনসংখ্যা ৪.৪০ কোটির মধ্যে ৪.১৩ কোটি ছিল বাংলা ভাষাভাষী। এখানে ৯৮% বাংলা এবং মাত্র ১.১% ছিল উর্দু ভাষী। অথচ বাংলা ভাষাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বেশ কিছু পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু সংগ্রামের ঐতিহ্যে লালিত বাঙালি জাতিমাতৃভাষার ওপর এ আঘাতের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। পাকিস্তান সৃষ্টির ছ’মাস পেরুতে না পেরুতে তারা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রাজপথে নামে যা ১৯৫২ সালে দ্বিতীয় পর্বের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সাফল্য লাভ করে।
খ) ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু, অন্যান্য নেতৃত্ব ও নারী সমাজঃ
বঙ্গবন্ধুর অবদান:
রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহবায়কসহ অনেকেই তখন দোদুল্যমানতায় ভুগছে, আপস করতে চাইছে সরকারের সঙ্গে। একটা বজ্রকণ্ঠ সচকিত হয়ে উঠলো সরকার কি আপস প্রস্তাব দিয়েছে? নাজিমুদ্দিন সরকার কি বাংলা ভাষার দাবি মেনে নিয়েছে? যদি তা না হয় তবে আগামীকাল ধর্মঘট হবে। সেক্রেটারিয়েটের সামনে পিকেটিং হবে। এই বজ্রকণ্ঠ ছিলো শেখ মুজিবের। ছাত্রনেতা শেখ মুজিবকে সমর্থন দিলেন অলি আহাদ, তোয়াহা, শওকত সাহেব, শামসুল হক। অলি আহাদ উল্লেখ করেছেন “সেদিন সন্ধ্যায় যদি মুজিব ভাই ঢাকায় না পৌঁছাতেন তা হলে ১১ মার্চের হরতাল, পিকেটিং কিছুই হতো না। তরুণ শেখ মুজিব সেই রাতে গোপালগঞ্জ থেকে এসে ফজলুল হক হলে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদান করেন। ১১ মার্চে সচিবালয়ের পিকেটিং করার সময় শেখ মুজিব গ্রেফতার হন।
শেখ মুজিবসহ অন্য ছাত্রদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ১৩ মার্চ ছাত্র ধর্মঘট এবং ১৪ মার্চ প্রদেশব্যাপী দ্বিতীয় হরতাল পালিত হয়। ১৫ মার্চ শেখ মুজিব এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ জেল থেকে মুক্তি লাভ করে। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে পুকুর ধারে একটি ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন সদস্য কারামুক্ত ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে অ্যাসেম্বলি হাউস অভিমুখে ছাত্রদের একটি বিক্ষোভ মিছিল পরিচালিত হলো এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করলো।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বে অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে পল্টনে জনসভায় ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তবে এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়া ১৯৪৮ সাালের চাইতেই ব্যাপকতর ছিলো।
খাজা নাজিমউদ্দীনের ঘোষণায় জেলের অভ্যন্তরে তরুণ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। শেখ মুজিব এবং মহিউদ্দিন আহমদ তখন ঢাকা জেলে বন্দি ছিলেন। মহিউদ্দিন আহমদের ভাষ্যমতে শেখ মুজিব অসুস্থতার ভান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল ডেকে অ্যাসেম্বলি ঘেরাও কর্মসূচির পরামর্শ দেন শেখ মুজিব। শেখ মুজিবকে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে আবারও জেলে ফেরত পাঠানো হয়।
১৮ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হয়। নারায়গঞ্জ স্টিমার ঘাটে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্রনেতা শামসুদ্দোহাসহ কয়েকজন ছাত্রনেতার সঙ্গে কথা হয়। শেখ মুজিব পুনরায় অনুরোধ করলেন ২১ ফেব্রুয়ারিতে হরতাল মিশিল শেষে আইনসভা যেন ঘেরাও করা হয় এবং বাংলা ভাষার সমর্থনে আইনসভার সদস্যদের স্বাক্ষর আদায় করা হয়। শেখ মুজিব কারাগারে থাকা অবস্থায় বাংলা ভাষার সমর্থনে ১৮ ফেব্রুয়ারি অনশন শুরু করেন এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি অনশন ভঙ্গ করেন।
ভাষা আন্দোলনে নারী:
আটচল্লিশ ও বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনে তকালীন এদেশের নারী সমাজের প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। মিছিল, স্লোগান, সভা-সমিতিতে তারাও পুরুষের পাশাপাশি সগ্রাম করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশেষ করে কামরুন্নেসা স্কুল এবং ইডেন কলেজের ছাত্রীদের ভূমিকা ছিল সংগ্রামী। মিছিল মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে নাদিরা চৌধুরীসহ আরও অনেকে পােস্টার, ফেস্টুন লিখন এবং নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ঢাকার বাইরেও নারী সমাজের ভূমিকা ছিল সক্রিয় এবং প্রতিবাদী। যশােরে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন হামিদা রহমান।
বগুড়ার বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন রহিমা খাতুন, সালেহা খাতুনসহ অনেকে। ভাষা আন্দোলনে সিলেটের নারীদেরও ব্যাপক ভূমিকা ছিল। এ আন্দোলনে সংগ্রামী ভূমিকা রাখেন হাজেরা মাহমুদ, যােবেদা খাতুন চৌধুরী, শাহেরা বানু, সৈয়দা লুফুন্নেছা খাতুন, সৈয়দা নাজিরুন্নেছা খাতুন, রাবেয়া খাতুনসহ আরও অনেকে। পােস্টার ও প্রচার পত্রের মাধ্যমে আন্দোলন সচল রাখার তৎপরতা চালানোর সময় ১৯৪৯ সালের ১৩ই আগস্ট গ্রেফতার হন লিলি চক্রবর্তী । এসব সংগ্রামী ভূমিকার পাশাপাশি ঐ সময় বিভিন্ন স্থানে নারীরা ভাষা আন্দোলনকারীদের সহযােগিতা করেন। তাঁদের মধ্যে নিবেদিতা নাগ, সারা তৈফুর মাহমুদ, সাহেরা বানু উল্লেখযােগ্য।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি যারা পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের অধিবেশন বর্জন করেন, তাঁদের মধ্যে আনােয়ারা খাতুন ছিলেন অন্যতম। তিনি ব্যবস্থাপক সভায় বাংলা ভাষার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে ছাত্রীরাও দুঃসাহসী ভূমিকা রাখেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙ্গায় যারা সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন, তারা হলেন শামসুন্নাহার, রওশন আরা, সুফিয়া ইব্রাহিম সহ অনেকে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে ভাষা আন্দোলনের নেত্রী মমতাজ বেগম গ্রেফতার হলে পুলিশ জনতার মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়েছিল।
ভাষা আন্দোলনে অন্যান্য নেতৃত্ব:
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ. ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ আরও অনেকে। এছাড়া ১৭ জন ছাত্র-যুবক আহত হয়। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রা সহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিক্সাচালক আউয়াল এবং অলিউল্লাহ নামক এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলেও পুলিশ অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এ নির্লজ্জ, পাশবিক, পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদীয় দল থেকে সেদিনই পদত্যাগ করেন। ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে রাতারাতি ছাত্রদের দ্বারা গড়ে ওঠে শহীদ মিনার, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন।
গ) জাতীয়তাবাদ বিকাশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য:
ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার মর্যাদার জন্যই গড়ে ওঠেনি। পাকিস্তানের মাত্র ৭.২% জনগণ ছিল উর্দু ভাষাভাষী। পক্ষান্তরে ৫৪.৬% জনগণের ভাষা বাংলাকে উপেক্ষা বাঙালি স্বভাবতই মেনে নিতে চায় নি।এর সাথে তাদের জীবিকার্জনের প্রশ্নও জড়িত ছিল। এমনিতে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম থেকেই জনসংখ্যার সংখ্যাধিক্য বিষয়টি অমান্য করে পশ্চিম পাকিস্তানে রাজধানী, প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু স্থাপিত হয়।
শাসকদের ভাষা উর্দুকেই তাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বেছে নেয়ায় বাঙালিদের চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল রাজনীতিসহ সর্বত্র বাঙালিকে বঞ্চিত করার পশ্চিমা মানসিকতা। তাই ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে মুসলিম লীগের মুসলিম জাতীয়তাবাদ ও দ্বিজাতি তত্তও ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে। অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্যায় হিসেবে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠাকে তারা বেছে নেয়। এই বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাই ষাটের দশকে স্বৈরশাসন বিরোধী ও স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে আন্দোলনে প্রেরণা জোগায়।
প্রথমত: ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে সংগঠিত গণ আন্দোলন। এটি শুধু ভাষার মর্যাদার জন্যই গড়ে ওঠেনি। ভাষা আন্দোলনের ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্যায় হিসেবে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠাকে বাঙালিরা বেছে নেয়। এই বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাই ষাটের দশকে স্বৈরশাসন বিরোধী ও স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে আন্দোলনে প্রেরণা জোগায়।
দ্বিতীয়ত: ভাষা আন্দোলনের ফলে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ ঘটে। এই আন্দোলন দ্বিজাতি তত্ত্বের ধর্মীয় চেতনার মূলে আঘাত হানে। পাকিস্তান সৃষ্টির সাম্প্রদায়িক ভিত্তি ভেঙ্গে বাঙালিরা অসাম্প্রদায়িক চেতনার আন্দোলন শুরু করে। এর ফলে ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িক সাম্প্রতি গড়ে ওঠে।
তৃতীয়ত: ভাষা আন্দোলনে মুসলিম লীগ জনগণের মানসিকতা ও স্বার্থ উপেক্ষা করে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর ফলে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে দলটির শোচনীয়ভাবে পরাজয় ঘটে। এর পর আর কোন নির্বাচনে মুসলিম লীগ জয়ী হয়নি।
চতুর্থত: ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ২১ ফেব্রুয়ারি শোক দিবস হিসেবে ছুটি ও শহিদ দিবস ঘোষণা করে। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা ভাষা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়। ১৯৬২ সালে সংবিধানে তা বহাল থাকে।
পঞ্চমত: যুক্তফ্রন্ট পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য তুলে ধরে, যা ষাটের দশকে আওয়ামী লীগের ছয় দফায় পরিস্ফুটিত হয়। স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয় যার প্রেরণা ছিল ভাষা আন্দোলন।
ষষ্ঠত: ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর স্বীকৃতি দান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।
ঘ) বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণ:
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃত এবং ২০১০ সালে জাতিসঙ্গের সাধারণ পরিষদ ‘এখন’ থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হবে’ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। আর এভাবেই বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া চলমান।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে UNESCO কর্তৃক বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি বিশ্বদরবারে এনে দিয়েছে এক বিশাল খ্যাতি। ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্বজুড়ে অমর একুশের উদযাপন নিঃসন্দেহে এক বিশাল জাতীয় গৌরব ও সম্মানের। ২০০০ সাল থেকে UNESCO এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে।
২০০১ সালের ১৫ মার্চ বিশ্বের সব মাতৃভাষার গবেষণা, উন্নয়ন ও সংরক্ষণে কাজ করার উদ্যোগে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ঢাকার সেগুনবাগিচায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভাষাসংক্রান্ত গবেষণা,ভাষা সংরক্ষণ ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এটি ভাষার ক্ষেত্র আন্তর্জাতিক সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে যা বাংলা ভাষাকে বিশ্বমর্যাদায় আসীন করতে ভূমিকা রাখছে।
২০১০ সালের ৩ নভেম্বর জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে ৪র্থ কমিটিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি উত্থাপন করে এবং প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ফলে এটি বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষার প্রতি বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন এবং সম্মান প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিক চর্চা বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে। মাতৃভাষার সংখ্যার বিচারে বাংলা ভাষা পৃথিবীর একটি শক্তিশালী ভাষা।
একমাত্র আফ্রিকার সিয়েরালিওনে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সংসদ বাংলাকে স্বীকৃতির বিল পাস করে। ফলে বাংলা ভাষা লাভ করে এক অনন্য মর্যাদা।
এই মুহূর্তে বহির্বিশ্বে ৩০টি দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু রয়েছে বাংলা বিভাগ, সেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার অবাঙালি পড়ুয়া বাংলাভাষা শিক্ষা ও গবেষণার কাজ করছে। এছাড়া চীনা ভাষায় রবীন্দ্র রচনাবলির ৩৩ খণ্ডের অনুবাদ এবং লালনের গান ও দর্শন ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।