ক) বিপণন কার্যাবলি ধারণা
সাধারণ লোকজন বিপণন কার্য বলতে শুধুমাত্র ক্রয় ও বিক্রয়কেই বুঝে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষেবিপণন কার্যের পরিধি অনেক বিস্তৃত। বিপণন কার্যাবলীকে এমন কতগুলো কাজ বা সেবার সমষ্টি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায় যা উৎপাদকের নিকট থেকে ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর নিকট পণ্য বা সেবার প্রবাহ পরিচালিত করার প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে পণ্য ও সেবার আদান-প্রদানে যেসব কার্যাবলি জড়িত থাকে সেগুলো বিপণন কার্যের আওতায় পড়ে। একটি বিপণন কার্য উৎপাদক নিজে কিংবা মধ্যস্থ ব্যবসায়ী (পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ী, আড়তদার) বা ভোক্তারা সম্পাদন করতে পারে।
বিপণন কার্যাবলি উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যবর্তী পর্যায়ে পণ্য বা সেবা পৌছে দেওয়ার জন্য সম্পাদিত হয়ে থাকে। বিপণন কার্যাবলির সাথে পণ্যের স্বত্ত¡ পরিবর্তন,পণ্যের হস্তান্তর, পণ্যের সংরক্ষণ, পণ্যের প্রসারসহ ইত্যাদি জড়িত। বিপণন পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে বিপণন কার্যাবলি নিয়মিত বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। কারণ এর মাধ্যমে বিপণন-দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। সাধারণত বিপণনেক্রয়, বিক্রয়, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, প্রমিতকরণ ও পর্যায়িতকরণ, অর্থসংস্থান, মোড়কীকরণ, ঝুঁকি-বহন, বাজার তথ্য সংগ্রহ, মূল্য নির্ধারণ, পণ্যের প্রসারইত্যাদি কাজ সম্পাদিত হয়।
খ) ক্রয় ও বিক্রয়ের ধারণার গুরুত্ব
ক্রয় ধারণার গুরুত্ব
ভোক্তা যেসময়ে ও যে স্থানে পণ্য ক্রয় করতে চায় সেসময় পণ্য বা সেবা বিপণনকারী পণ্য সরবরাহ করে।
পণ্যের সঠিক মান ও মূল্য বজায় রেখে বিপণনকারী পণ্য বাজারে সরবরাহ করে যেন ভোক্তা সহজে পণ্য ক্রয় করতে পারে।
ভোক্তার প্রত্যাশা ও চাহিদার বিভিন্নতা অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুত করে, সেই পণ্য বাজারে সরবরাহ করার ফলে ক্রেতা বা ভোক্তাউপযুক্ত পণ্য ক্রয় করতে পারে।
ভোক্তার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য ক্রয় কার্যক্রমের মাধ্যমে ভোক্তার নিকট মানসম্মত পণ্য যথাযথ মূল্যে সঠিক স্থানে সহজলভ্য করা হয়।
বিপণনকারী ভোক্তার ক্রয় নিশ্চিত করার জন্য ভোক্তার চাহিদা আগেই নিরূপন করে পণ্য প্রস্তুত করে রাখে, আবার পণ্য সংরক্ষণও করে।
বিক্রয় ধারণার গুরুত্ব
বিক্রয়ের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতা একটি স্থানে একত্রিত হতে পারে। বিক্রেতা পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাকে জানাতে পারে, আবার ক্রেতার কাছ থেকে পণ্য সম্পর্কে অভিব্যক্তি ও জানতে পারে।
বিক্রয়ের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে পণ্য বা সেবার মালিকানার বিনিময় হয়। তাই বিক্রয় বিপণন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ভোক্তার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য বিপণনকারী ক্রেতা বা ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করে বিক্রয়ের মাধ্যমে।
বিক্রয় কার্যক্রমের মাধ্যমে বিপণনকারী প্রকৃত ক্রেতা সৃষ্টি করতে পারে, আবার স্থায়ী ক্রেতায় রূপান্তর করতে পারে।
পণ্য প্রস্তুত করার পর পণ্য বিক্রয় করে বিপণনকারী বাজারে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সমতা রাখতে পারে।
গ) পরিবহন ও গুদামজাতকরণের ধারণা ও সুবিধা
পরিবহনের ধারণা
যেখানে পণ্য উৎপাদিত হয় সেখান থেকে যে স্থানে পণ্য ভোগ হয় সে স্থানে পণ্য স্থানান্তর করে পরিবহনস্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করে। পরিবহন বিপণনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা বাজারের পরিধি স্থানীয় এলাকা থেকে দূর অঞ্চলে সম্প্রসারিত করে, জাতীয় বাজারের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবশের সুযোগ করে দেয়, ভোক্তাদের পণ্য ভোগে বৈচিত্র্য আনয়ন করে, বিপণন ব্যয় হ্রাস করে এবং পণ্যেরহস্তান্তর দ্রুত করে। উন্নত পরিবহন প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য পণ্য উৎপাদনে বিশেষায়িত হওয়ার পথ প্রশস্ত করে যা আন্তঃআঞ্চলিক উন্নয়নে ভারসাম্য সৃষ্টির সহায়ক। উৎপাদক ও ক্রেতার মধ্যে দূরত্ব যত বেশি হবে পরিবহনের গুরুত্বও তত বৃদ্ধি পাবে। উৎপাদন কেন্দ্রে পণ্য প্রেরণের জন্য বিভিন্ন প্রকার পরিবহন ব্যবহৃত হয়, যথা
(ক) স্থল পরিবহন (রেল ও সড়ক পথ),
(খ) জল পরিবহন (নৌপথ ও সামুদ্রিক পথ) এবং
(গ) বিমান পরিবহন। বিমান পরিবহন খুবই ব্যয়সাধ্য বলে পণ্য পরিবহনে স্থল এবং জলপথই সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।
পরিবহন এর সুবিধা
পণ্য উৎপাদকের নিকট থেকে ক্রেতা বা ভোক্তার কাছে পৌছে দিয়ে পরিবহন স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করে।
পরিবহনের মাধ্যমে সঠিক সময়ে উৎপাদকের কাছ থেকে ক্রেতা বা ভোক্তার কাছে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
ভোক্তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিপণনকারী মানসম্মত পণ্য, সঠিক মূল্যে সরবরাহ করার সাথে সাথে সঠিক স্থানে সহজলভ্য করে।
পরিবহনের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
উৎপাদকের কাছ উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করা হয় ফলে উৎপাদক পণ্য বন্টনের ব্যাপারে চিন্তা মুক্ত থাকে।
গুদামজাতকরন এর ধারণা
সভ্যতার বিকাশ ঘটার সাথে সাথে পণ্য উৎপাদনে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটল। আর এ সাথে প্রয়োজন দেখা দিল পণ্যদ্রব্য সংরক্ষণের। প্রয়োজনের অতিরিক্ত উৎপাদিত পণ্য ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটানো ও নষ্ট হবার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গুদামজাতকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। গুদামজাতকরণ (বা পণ্য সংরক্ষণ) বিপণনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পণ্য উৎপাদনের পর ব্যবহার হওয়া পর্যন্ত মজুদ করে গুদামজাতকরণ সময়গত উপযোগ সৃষ্টি করে। বিপণনের প্রায় প্রত্যেক পর্যায়েই পণ্য সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। পণ্যের উৎপাদন ও চূড়ান্ত বিক্রয়ের মধ্যবর্তী সময়ে সঠিক অবস্থায় পণ্য নিরাপদে রাখাকেই সংরক্ষণ বলা যায়। সংরক্ষণ কার্য বন্টন প্রণালির প্রায় সর্বস্তরেই সম্পাদিত হয়ে থাকে।
উৎপাদক যেমন তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছে রেখে দেয়, ঠিক অনুরূপভাবে পরিবহন এজেন্সী, পণ্যাগার কর্তৃপক্ষ এবং পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মতো অন্যান্য মধ্যস্থব্যবসায়ীগণও পণ্য সংরক্ষণ করে থাকে। যেসব পণ্যের চাহিদা সারা বছরব্যাপী লেগে থাকে অথচ উৎপাদিত হয় একটি বিশেষ মৌসুমে, সেগুলোকে বছরব্যাপী চাহিদা মেটানোর জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। কৃষিপণ্যের বিপণনে তাই গুদামজাতকরণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
গুদামজাতকরন এর সুবিধা
১. সময়গত উপযোগ সৃষ্টি: অনেক পণ্য আছে যা সারা বছর উৎপাদিত হয় না, বছরের বিশেষ মৌসুমে এসব উৎপাদিত হয়ে থাকে। অথচ এসব পণ্য সারা বছরই ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। পণ্য সংরক্ষণ করে মৌসুমের বাড়তি উৎপাদন বছরের অন্যান্য সময়ে ব্যবহারের জন্য ধরে রাখা যায়। তাই সংরক্ষণের মাধ্যমে সময়গত উপযোগের সৃষ্টি হয়।
২. নিয়মিত সরবরাহ: দুষ্প্রাপ্যতার সময় ভোক্তাদের পণ্য সরবরাহ নিয়মিত রাখার উদ্দেশ্যে মৌসুমী-পণ্য উৎপাদনের পর সংরক্ষণ করা উচিত। বিভিন্ন প্রকার শস্য, তুলা, তামাক ইত্যাদি কয়েক মাস গুদামজাত করে রাখা যায়। অনেক পচনশীল দ্রব্য যেমন আলু, ডিম, মাছ, ফল ইত্যাদিও সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ফলে প্রয়োজনের সময় এসব দ্রব্য বাজারজাত করে ভোক্তাদের নিয়মিত সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
৩. ব্যবসায়িক উত্থান-পতনের হ্রাস: পণ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে ব্যবসায়িক উত্থান-পতনের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করা যায়। যখন ব্যবসায় মন্দা চলতে থাকে, তখন উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করা হলে তা উৎপাদনের বর্তমান গতি অব্যাহত রাখে। একইভাবে যখন পণ্যের চাহিদা তীব্রতর হয়, তখন পণ্যাগার থেকে তা বাজারে ছেড়ে দিয়ে সরবরাহ ঠিক রাখা যায়।
৪. মূল্যে স্থিতিশীলতা আনয়ন: পণ্য সংরক্ষণ করে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় বিধান করা যায়। চাহিদা ও সরবরাহের এরূপ সমন্বয় বাজারে পণ্যের উঠা-নামা হ্রাস করে, ফলে মূল্যে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
৫. সংরক্ষণ স্থান: পণ্যসামগ্রী এমন স্থানে সংক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত যা উৎপাদনও বিপণনের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তির জন্য সুবিধাজনক হয়। পণ্যাগার যথোপয্ক্তু স্থানে অবস্থিত থাকলে পণ্যের পরিবহন ত্বরান্বিত হয়, পরিবহন ব্যয় হ্রাস পায় এবং ভোক্তা অনায়াসে ও কম মূল্যে পণ্য সংগ্রহ করতে পারে।
ঘ) প্রমিতকরণ ও পর্যায়িতকরণ এর ধারণা ও সুবিধা
প্রমিতকরণ এর ধারণা
বিপণন শাস্ত্রে মান বলতে কোন দ্রব্যের বাহ্যিক বা নৈসর্গিক মানকে বুঝায়। যেকোন পণ্যদ্রব্যের ওজন, আকার, মজবুতি, রং বা বর্ণ, স্থায়িত্ব, অবয়ব বা অন্যান্য বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য মান-এর অন্তর্ভুক্ত। প্রমিতকরণ স্ট্যান্ডার্ড বা মানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
যখন কোন একটি পণ্য প্রমিতকরণ করা হয়, তখন এ দ্বারা বুঝানো হয় যে নির্দিষ্ট মানের সাথে পণ্যের সাদৃশ্য রয়েছে। আরও সোজা কথায় বলা যায়, পণ্যের সুনির্দিষ্ট মান স্থির করাই হচ্ছে মান নির্ধারণ বা প্রমিতকরণ। পণ্যদ্রব্যের কতিপয় বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মান নির্ধারণ করা হয়। সুনির্দিষ্ট মান স্থির করার পর পণ্যদ্রব্য পর্যায়িত করা হয়।
বিপণন কার্যে দক্ষতা আনয়ন ও বিক্রয় কার্যে গতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পণ্যসামগ্রীর কতিপয় সাধারণ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে পণ্যের মান নির্ধারণ করা হয়। মান নির্ধারণকে প্রমিতকরণও বলা হয়। প্রতিষ্ঠিত মান অনুসারে পণ্যসামগ্রীকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করার নাম পর্যায়িতকরণ।
প্রমিতকরণ এর সুবিধা
পণ্য বিপণনে সুবিধার জন্য প্রমিতকরণের মাধ্যমে পণ্যের গুণাগুণ, আকার, ওজন ইত্যাদি অনুযায়ী পণ্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।
নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে প্রমিতকরণে পণ্যের মান নির্ধারণ করা হয়।
পণ্যের মানের বিভিন্নতা অনুযায়ী প্রমিতকরণের মাধ্যমে পণ্যকে ভাগ করা হয় বলে পরবর্তীতে সে অনুযায়ীপণ্যকে সংরক্ষণ, পরিবহন, বিজ্ঞাপনসহ ইত্যাদি বিপণনকার্য সম্পাদন করা হয়।
বিভিন্ন মানের পণ্য বাজারে থাকার কারণে ক্রেতা বা ভোক্তা তার সামর্থ্য ও রুচি অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করতেপারে, ফলে ক্রেতা বা ভোক্তার সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব।
পণ্যের মান নির্ধারিত থাকলে পণ্যের গুণগত মান, আকার ইত্যাদি অনুযায়ী মোড়কিকরণের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
পর্যায়িতকরণ এর ধারণা
প্রমিতকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কতিপয় মান স্থির করা হয়। প্রতিষ্ঠিত মানসমূহকে ‘গ্রেড’ বলা হয়। এসব মান বা গ্রেডের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকার কৃষিপণ্য ও শিল্পজাত পণ্যকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। একইরূপ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পণ্যদ্রব্যের শ্রেণী বিভাজন প্রক্রিয়াকে বলা হয় পর্যায়িতকরণ। পূর্ব-নির্ধারিত মান পর্যায়িতকরণের মূল ভিত্তি। সুতরাং দেখা
যাচ্ছে, পর্যায়িতকরণ ও প্রমিতকরণ একটি অপরটির সাথে জড়িত- একটিকে ছাড়া অপরটি অচল। প্রমিতকরণ ব্যতীত পর্যায়িতকরণ অর্থহীন, তেমনি পর্যায়িতকরণ ব্যতীত প্রমিতকরণ বা মান নির্ধারণ সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।একইরূপ গুণাগুণ সম্পন্ন পণ্যের কোন্ মানের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে তা নির্ণয় করার একটি পন্থা হলো পণ্যের পর্যায়িতকরণ। উদাহরণস্বরূপ, আলু ব্যবসায়ী আলুকে চাষের উৎপত্তি স্থান বা আকার অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করতে পারে।
পর্যায়িতকরণ এর সুবিধা
বিক্রয়ের পূর্বে পণ্য পর্যায়িতকরণ করে নিলে সেই অনুযায়ী বিক্রয়ের কাজ তুলনামূলকভাবে সহজে করা যায়।
ক্রেতা বা ভোক্তাদের বিভিন্নতার কারণে একই ধরনের পণ্য দিয়ে তাদের সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায় না। তাই পর্যায়িতকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্রেতা বা ভোক্তার বিভিন্ন প্রয়োজন বা চাহিদা পূরণ করা যায়।
পণ্য পর্যায়িতকরণের ফলে ক্রেতা ও ভোক্তাদের মধ্যে বিপণনকারী সম্পর্কে অনুকূল ধারণা তৈরি করা যায়।
প্রমিতকরণ অনুযায়ী পণ্য পর্যায়িতকরণের ফলে মানের বিভিন্নতা অনুযায়ী সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।
পণ্যের পর্যায়িতকরণ করা থাকলে পণ্যের ভিন্নতা অনুযায়ী অভিষ্ট ভোক্তা সনাক্ত করে তাদের কাছে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
ঙ) মোড়কীকরণ এর ধারণা ও সুবিধা
মোড়কীকরণ এর ধারণা
সাধারণ অর্থে, মোড়কিকরণ হলো পণ্যকে বিপণনযোগ্য করার জন্য প্যাকিং বা মোড়ক-বাঁধাই করার কাজ। শিল্পজাত পণ্যের ক্ষেত্রে মোড়ক-বাঁধাই অধিক প্রয়োজনীয়। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে পাস্তুরিত দুধ, মাছ-মাংস ইত্যাদি প্যাকিং করে (প্রক্রিয়াজাতের পর) বিক্রয় করা হয়। কেবলমাত্র বিনষ্টের হাত থেকে রক্ষার জন্য পণ্য প্যাকিং করা হয় না, পণ্যকে ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর নিকট আকর্ষণীয় করে তোলাও মোড়কিকরণের অন্যতম উদ্দেশ্য। সুতরাং, মোড়কিকরণ হলো পণ্যের নির্দিষ্টমান সংরক্ষণ, পরিবহন ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পণ্যের মোড়ক নির্ধারণ, নক্সাকরণ, উন্নয়ন ও পণ্যের গায়ে লাগানোর সাথে জড়িত সকল কাজের সমষ্টি।
মোড়কীকরণ এর সুবিধা
- মোড়কিকরণের মাধ্যমে পণ্যের মান ও গুণগত বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।
- পণ্যের মোড়কিকরণ করা থাকলে প্রতিকূল আবহাওয়া , চুরি, অবহেলাজনিত নষ্ট ইত্যাদি সমস্যা থেকে পণ্যকে রক্ষা করা যায়।
- পণ্যের আর্কষণীয় নক্সা, রং, ছবি ইত্যাদির মাধ্যমে ক্রেতা ও ভোক্তাকে আর্কষণ করা যায় ও সহজে সনাক্ত করা যায়।
- মোড়কে পণ্যের সকল প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া থাকে; যেমন পণ্যের ওজন, উপকরণ, ব্যবহার বিধি, উৎপাদনকাল ইত্যাদি। এর ফলে ক্রেতা ও ভোক্তা পণ্য সম্পর্কে সহজে জানতে পারে।
- পণ্য মোড়কিরণের ফলে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পণ্য পরিবহন করা সহজ হয়।
- ছোট ছোট বস্তুকে অল্প জায়গার মধ্যে রাখার জন্য মোড়কে ভরার প্রয়োজন পড়ে। যেমন অনেকগুলো পেন্সিলকে স্তূপাকারে রাখলে তা যতটুকু জায়গা নেবে, সেগুলো যদি সুশৃঙ্খল ভাবে সাজিয়ে রাখা হয়, তবে তারচেয়ে অনেক কম জায়গায় পেন্সিল গুলোকে রাখা সম্ভব হবে।
- মোড়কজাত করনের ফলে পণ্য বহন, সংগ্রহ করন, প্রদর্শন, বিক্রয়,ব্যবহার করা, খোলা, পুনরায় বন্ধকরা ইত্যাদি বিষয়গুলো সহজ হয়ে যায়।
- মোড়ক এর ভেতরের বস্তুটিকে আশেপাশের বস্তু থেকে আলাদা রাখে এবং বাহ্যিক আঘাত, কম্পন, চাপ, তাপমাত্রা ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে।